আমাদের খেলাঘর (১৮০৯-২১১)


আজ সমরের বিয়ে। সমর ছুটিতে চলে গেছে। সমর আমার বাড়ির কেয়ারটেকার। তার অবর্তমানে সে দায়িত্ব দিয়ে গেছে কোরেশীকে। কোরেশী কেয়ারটেকার হলেও ভাব নিয়ে বসে আছে; যেন সে এ-বাসার মালিক। বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে একজন এসে আমাকে রেখে কোরেশীর সাথে ডিল করছে দেখে ব্যাপারটা আমার ইগোতে লাগল। শালা কেয়ার টেকারের বাচ্চা। তুই কি মালিক যে মালিকের মতো ভাব নিয়ে বসে থাকবি? স্পর্ধা কত!

অফিস থেকে আসার পথে দেখলাম, কোরেশী বসে বসে মশা মারছে। দেখেই গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। শালা জানোয়ার। একটুও মায়াদয়া নেই! জীবহত্যা মহাপাপ এটা আজ তাকে জানিয়ে দিতে হবে। উপর থেকে বুয়াকে বলে ইলেক্ট্রিক বেত আনিয়ে বিসমিল্লাহ বলে কোরেশীর পিঠ উদ্বোধন করে নিলাম। ঝেড়ে মিনিট পাঁচেক পেটানোর পর হারামজাদা কাতরাতে শুরু করে দিলো।

আমারও খানিকটা ক্লান্তি আসাতে বুয়াকে বললাম, বুয়া— এবার তুমি ধরো। বুয়াকে দিয়ে আরো মিনিট পাঁচেক পেটানোর পর উপরে চলে আসলাম। হারামজাদা একটা! কোথ্যেকে যে এসব আসে!

অফিস থেকে এসে রেস্ট নিচ্ছি। হঠাৎ কমরেডের ফোন, ‘ভাই, আজকে আমাদের একটা মানববন্ধন আছে। আপনাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে আমাদের আজকের এই মানববন্ধন’

সময় জিজ্ঞেস করাতে বলল, রাত নয়টায় অনলাইনে।

বাহ! ইদানীং মানববন্ধনও অনলাইনে সেরে নেয়া যায়। দারুণ সিস্টেম তো!! কমরেডের ওপরকার বিরক্তিটা চেপে গিয়ে সৌজন্য আলাপচারিতা সেরে নিয়ে ভাবলাম কোরেশীকে একটু দেখে আসি।

নিচে নেমে দেখি, কোরেশী আবৃত্তি করে বলতেছে—

“কুকুরের বাচ্চা ঘেউ ঘেউ করবে,

সে কবিতা লিখবে কেন?

চুৎমারানি ছিনাল ঘরসংসার করবে,

সে কবিতা লিখবে কেন?

বান্দির ঘরের বান্দি হখলটি,

কুত্তার ঘরর কুত্তা হখলটি,

লাইফটা হেল করি দিলো।”

হারামজাদা শুয়ার! ‘কবিদের’ নিয়ে ফাজলামো?

বুয়াকে ডাক দিতেই কোরেশী পায়ে ধরে মাফ চাইতে শুরু করে দিলো। দিলাম মুখ বরাবর লাথি একটা। বুয়ার হাত থেকে বেত নিতে যাব; তখনই মনে পড়লো— একটু পরেই মানববন্ধনে যোগ দিতে হবে। এ সময়ে কোনোভাবে টায়ার্ড হওয়া চলবে না। বুয়াকে দিয়ে মিনিট পাঁচেক পিটিয়ে রুমে এসে ‘প্রিপারেশন’ নিতে শুরু করলাম। নেট ঘেঁটে দেখতে লাগলাম কুকুর নিধনের যত অপকারিতা আছে…

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.