আমাদের খেলাঘর (১৮০৯-২১১)

আজ সমরের বিয়ে। সমর ছুটিতে চলে গেছে। সমর আমার বাড়ির কেয়ারটেকার। তার অবর্তমানে সে দায়িত্ব দিয়ে গেছে কোরেশীকে। কোরেশী কেয়ারটেকার হলেও ভাব নিয়ে বসে আছে; যেন সে এ-বাসার মালিক। বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে একজন এসে আমাকে রেখে কোরেশীর সাথে ডিল করছে দেখে ব্যাপারটা আমার ইগোতে লাগল। শালা কেয়ার টেকারের বাচ্চা। তুই কি মালিক যে মালিকের মতো ভাব নিয়ে বসে থাকবি? স্পর্ধা কত!

অফিস থেকে আসার পথে দেখলাম, কোরেশী বসে বসে মশা মারছে। দেখেই গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। শালা জানোয়ার। একটুও মায়াদয়া নেই! জীবহত্যা মহাপাপ এটা আজ তাকে জানিয়ে দিতে হবে। উপর থেকে বুয়াকে বলে ইলেক্ট্রিক বেত আনিয়ে বিসমিল্লাহ বলে কোরেশীর পিঠ উদ্বোধন করে নিলাম। ঝেড়ে মিনিট পাঁচেক পেটানোর পর হারামজাদা কাতরাতে শুরু করে দিলো।

আমারও খানিকটা ক্লান্তি আসাতে বুয়াকে বললাম, বুয়া— এবার তুমি ধরো। বুয়াকে দিয়ে আরো মিনিট পাঁচেক পেটানোর পর উপরে চলে আসলাম। হারামজাদা একটা! কোথ্যেকে যে এসব আসে!

অফিস থেকে এসে রেস্ট নিচ্ছি। হঠাৎ কমরেডের ফোন, ‘ভাই, আজকে আমাদের একটা মানববন্ধন আছে। আপনাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে আমাদের আজকের এই মানববন্ধন’

সময় জিজ্ঞেস করাতে বলল, রাত নয়টায় অনলাইনে।

বাহ! ইদানীং মানববন্ধনও অনলাইনে সেরে নেয়া যায়। দারুণ সিস্টেম তো!! কমরেডের ওপরকার বিরক্তিটা চেপে গিয়ে সৌজন্য আলাপচারিতা সেরে নিয়ে ভাবলাম কোরেশীকে একটু দেখে আসি।

নিচে নেমে দেখি, কোরেশী আবৃত্তি করে বলতেছে—

“কুকুরের বাচ্চা ঘেউ ঘেউ করবে,

সে কবিতা লিখবে কেন?

চুৎমারানি ছিনাল ঘরসংসার করবে,

সে কবিতা লিখবে কেন?

বান্দির ঘরের বান্দি হখলটি,

কুত্তার ঘরর কুত্তা হখলটি,

লাইফটা হেল করি দিলো।”

হারামজাদা শুয়ার! ‘কবিদের’ নিয়ে ফাজলামো?

বুয়াকে ডাক দিতেই কোরেশী পায়ে ধরে মাফ চাইতে শুরু করে দিলো। দিলাম মুখ বরাবর লাথি একটা। বুয়ার হাত থেকে বেত নিতে যাব; তখনই মনে পড়লো— একটু পরেই মানববন্ধনে যোগ দিতে হবে। এ সময়ে কোনোভাবে টায়ার্ড হওয়া চলবে না। বুয়াকে দিয়ে মিনিট পাঁচেক পিটিয়ে রুমে এসে ‘প্রিপারেশন’ নিতে শুরু করলাম। নেট ঘেঁটে দেখতে লাগলাম কুকুর নিধনের যত অপকারিতা আছে…

অরূণিমা!

অরূণিমা!
প্রতি বছর বাজেট পেশ হয়ে কালো টাকা সাদা হয় কোনো এক নিয়মের ফাঁকে
বাড়ে নিত্য দ্রব্যাদির দাম
বাড়ে নাগরিক চাহিদার সাথে জীবনযাত্রার মান
নিকোটিনের সাথে আরোও বাড়ে তোমাকে ভাবার দাম৷ আরোপিত হয়
কর, শুল্ক আরো কতো হাবিজাবি,
বাড়ে না ভালোবাসার দাম কিংবা মান।

অরূণিমা!
কালো টাকা সাদা হয়, জীবন যাত্রার মান উন্নিত হয়
নিত্য দ্রব্যাদির মূল্য সংযোজন কর যোগ হয়
নিকোটিনের প্যাকেটের সতর্কবার্তা পরিবর্তন হয়,
অথচ তুমি’র অথবা তোমার ভালোবাসার কোনো এদিক সেদিক হয় না।
প্রথম দর্শনের সেই তুমিই যেন সব অর্থবছর শেষে একই।

আজ আমার দেশীয় চাকরী জীবনের শেষ দিন…

এই অসাধারণ মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই একধরণের খারাপ লাগা অনুভূতি কাজ করছে। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই। যারা আমার পিছনে এতোটা ইনভেস্ট করে গেল, তাদের তো অন্তত ফিরিয়ে দেয়া যায় না। 
অফিসে ঢুকতেই একধরণের হাহাকার অনুভব হলো, এই অফিস, অসাধারণ মানুষগুলোকে আমার ছেড়ে যেতে হচ্ছে। আমি বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অনেকাংশে সফল হলেও ভিতরে ভিতরে বড়োসড়ো ঝড় তোলপাড় করছে।
সবাই আসার পর যথানিয়মে অফিস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, কারোরই সেদিকে খেয়াল নেই। সিইও সাহেব স্মোক জোন এ পড়ে আছেন, বরূণা স্পোর্টস কর্ণারে, অনামিকা মেয়েটা বসে আছে রিডিং রুমে, সুনীল আসেই নি। কী একটা অবস্থা! ক্লায়েন্ট ডেডলাইন দিয়ে বসে আছে অথচ আমাদের কারোরই কাজের দিকে মনোযোগ নেই। যদিও আজকের পরে আমার দায়-দায়িত্ব থাকছে না তারপরেও আজকের দিন পর্যন্ত অন্তত কোম্পানি আমার রেস্পনসিবিলিটি এক্সপেক্ট করে।

‍‌‌‌‌~

চাকরীতে জয়েনের পর অনেকেই একজন জুনিয়রের ৬ ডিজিটের স্যালারি সুন্দর ভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাই প্রথম প্রথম অনেকেই আমাকে যার যার দিক থেকে হিংসে করা শুরু করে দিলো। আমি যথাসম্ভব স্কিপ করে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলাম। মাত্র ৬ মাসের জন্য কী দরকার হুদাই মানুষের সাথে ঝামেলা বাধানোর। আমি আমার মতো কাজ চালিয়ে যেতে লাগলাম। একবার কোম্পানির একটা পুরাতন প্রজেক্টে বাগ ধরা পড়লে কোম্পানি সেটার হটফিক্সে লেগে রানিং প্রজেক্টে পিছিয়ে পড়তে লাগলো। কারণ সেই প্রজেক্টের কোনো ডেভেলপারই কোম্পানিতে বর্তমান ছিলেন না। আর যারাই কাজ করছেন তাদের সবারই কোড পড়ে পড়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমি তখন একেবারেই নতুন তাই সিনিয়ররা একজন জুনিয়রকে এতো বড়ো প্রজেক্টে রাখতে তাদের ইগোতে লাগছে বা তারা চাননি কোনো জুনিয়র এতো প্রেশার নিক নতুবা হিংসে থেকেই আমাকে অব্যাবহৃত রেখে দিলেন। ২১ দিনের মাথায় সিইও সাহেব বিস্তারিত জানতে পেরে সিনিয়রদের বকাঝকা করে আমার সাথে আরো দু’জন দিয়ে বাকি সবাইকে বর্তমান প্রজেক্টে লাগিয়ে দিলেন। আমি জানি না সিইও আসলে এতো সাহস কেমনে করলেন। নাকি ৬ ডিজিটের স্যালারির প্র্যাক্টিকাল টেস্ট নিলেন সেটাও বুঝলাম না। সে যাই হোক আমার সাথে একজন সিনিয়র একজন জুনিয়র এবং আমি। আমিও অবশ্য জুনিয়র বটে।
আমার চিপসের ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ডাটা অনলাইনে রাখতে হবে, অফলাইন থেকে ডাটা নিয়ে সেটা প্রসেস করতে আমার অনেক সময় লেগে যায়। অনলাইনে যেটা আমি এক মিলিসেকেন্ডেরও কম সময়ে করতে পারি সেটা অফলাইনে করতে গেলে আমার প্রায় ১০০ মিলিসেকেন্ড বা তারও বেশী সময় লাগে।
তাই পুরো প্রজেক্ট একটা এসবিএন সাইটে আপ করে দিলাম দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথেই। আমার সিনিয়র আমার সাথে পারলে বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে ফেলেন। আমি তাকে বললাম ভাই একটা কফির ব্যবস্থা করেন আমি বাকিটা দেখতেছি। তিনি রীতিমতো অপমানবোধ করলেন সেই সাথে টাট্টা মশকরা করতেও ভুল করলেন না। আমি ওসবে কান না দিয়ে আমি আমার কাজ করে যেতে লাগলাম। পুরো প্রজেক্ট আপলোড হওয়ার পরে পিওনকে কফি দেয়ার কথা বলে আমি পুরোটা পড়ে নিলাম। কফি খেতে খেতে সিনিয়র ভাই জিজ্ঞেস করলেন তোমার কাজের আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। আমরা হটফিক্স করতেছি এটা তোমার মাথায় থাকা দরকার। এখানে যত কম সময় খরচ হবে ততই আমাদের লাভ। আমি হেসে হেসে উত্তর দিলাম ভাই রিলাক্সে কাজ না করলে আমি কাজের কোয়ালিটি ধরে রাখতে পারি না। আমি উনার সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি আর ওদিকে ফাইলগুলো পড়ে নিচ্ছি। ফাইল পড়া শেষ হওয়ার পরে বললাম চলেন ভাই কাজ শুরু করা যাক। আমার সাথে যে জুনিয়র ছিলো তাকে বললাম তুমি এক কাজ করো, তুমি বসে থাকো আর দেখো কেমনে হটফিক্স করতে হয়। আমার সিনিয়রকে ৭ টা মড্যুল ধরিয়ে দিয়ে বললাম আপনি জাস্ট এই ৭ টা চেক করেন বাকি পুরো প্রজেক্ট আমি দেখতেছি। তিনি রীতিমতো অপমানবোধ করলেও বিষয়টা আপাতত স্কিপ করে গেলেন, যাতে পরবর্তীতে তিনি মশকরা করতে পারেন। উনার অগ্নিমূর্তি চেহারারভাব দেখে আমি জুনিয়রকে সাথে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম ঘুরতে।
দুদিন পর সিইও সাহেব জানতে চাইলেন তার হটফিক্সের কী খবর। আমি সিনিয়র ভাইকে জিজ্ঞেস করলে পরে তিনি জানালেন তার আরো একদিন লাগবে। সিনিয়রের কাছ থেকে এসে সিইও কে জানিয়ে দিলাম আমরা কালকেই কাজ ডেলিভারী দিচ্ছি। আমার জুনিয়র আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে দেখলো। সেও মোটামুটি ট্রল করার একটা প্রিপারেশন নিয়ে রাখলো সম্ভবত। একে তো তাকে কিছুতেই হাত দিতে দেইনি। আবার সিনিয়রের সাথে খুব ভালো একটা ব্যবহারও দেখাইনি। তার উপর আবার আমার বেতনটা এমনিতেই সবার হিংসে। সবমিলিয়ে সবাই আমার দিকে খ্যাপে আছে।
– “যদি মাইন্ড না করেন আমি কাজটা করতেছি” আমি সিনিয়র ভাইকে বললাম 
– “তোমার কাজ শেষ?” উনি বললেন।
– “হুম আমার শেষ, আপনার টা শেষে ডেলিভার করে দেব।”
– “তাহলে তুমি রেস্ট করো আমি করতেছি।”
– “সমস্যা নাই আমি করতেছি, আপনি রিলাক্স করেন।”
– “ঠিক আছে তুমি করো আমি দেখি” বলে উনি আমার পাশে বসলেন। আমি একটার পর একটা ফিক্স করতেছি আর উনি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন। ৪০-৪৫ মিনিটের মাথায় সব শেষ করে আমার টিম নিয়ে মুভি দেখতে গেলাম।
এই প্রজেক্টের কাজ ডেলিভার করার পর, আমার কাজ প্রায় সবার তুলনায় শতগুনে বেড়ে গেল। জুনিয়র সিনিয়র সবারই আমার প্রতি একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়ে গেল। তারপর কারোর কোনো কোডে এরর দেখা দিলে আমার কথাই সবার মনে পড়তো। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম সবাইকে হেল্প করার।
মানুষগুলো কী সুন্দর নিজের মাথার ব্যবহার করে যাচ্ছে, নিজের আইডিয়া ইমপ্লিমেন্ট করে প্রবলেমে পড়তেছে আবার সলভ করতেছে, আর আমি…..
একটা চিপস নিয়ে জগতে সুপার হিউম্যানের ভূমিকা পালন করে করে মানুষের ভালোবাসা কুড়াচ্ছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জগতে চলাফেরা করছি আর মানুষের বাহবা কুড়াচ্ছি।

~

গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর আমার আইবিএমে জয়েন করার দিন তারিখ নির্দিষ্ট হলে পরে আমি সিদ্ধান্ত নেই কোথাও এক জায়গায় কয়েকদিনের জন্য ইন্টার্নিতে ঢুকে হালকা-পাতলা একটু এক্সপেরিয়েন্স নেব।
দেশের বেশ কয়েকটা কর্পোরেট অফিসে যোগাযোগ করলে পরে অনেকেই ফ্রেশার নিতে আপত্তি তুলেন। বিভিন্ন নীতিবাক্য শুনিয়ে আমাকে বিদায় করে দেন, এতে আমার নিজের জন্য একটুও মনখারাপ হয়নি। শুধু এটা ভেবেই মনখারাপ হতো যে, আমার তো চাকরি কনফার্ম আমার সাথে যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে তাদের কী হবে? এই এতো এতো গ্র্যাজুয়েটরা যাবে কোথায়? আর তারা এক্সপেরিয়েন্স-ই বা নিবে কোত্থেকে? একাডেমিক পড়ালেখা নামক জীবন নষ্টের কারখানা থেকে বেরিয়ে এরা যাবেই বা কোথায়?
স্রষ্টা কাউকে না খাইয়ে রাখেন না সেটা যেমন সত্য তেমনি স্রষ্টা এমনি এমনিও কাউকে কিছু খেতে দেন না। সবার স্রষ্টা এক তবু একেকজনের অংক একেক, বুঝি না ওসব।
যতই দিন যাচ্ছে আমার জয়েনিং এর দিন তারিখ সামনে আসতেছে আমার এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার আকাঙ্খাটা আকাঙ্খাতেই থেকে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কোম্পানি পাসপোর্ট এর কপি দেয়ার দিন তারিখও জানিয়ে দিয়েছে।
হুট করে কর্পোরেট লাইফে ঢুকে পড়া তাও সম্পূর্ণ অচেনা একটা দেশে অচেনা একটা পরিবেশে ব্যাপারটা অনেকাংশে আমার কাছে আন-ইজি লাগতেছে। শেষমেষ প্রথম যেই কোম্পানি থেকে রিজেক্ট খেয়েছিলাম সেখানে আবার গেলাম, আবার একি কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমি তাদের জানালাম আমি আপনাদের এখানে মাত্র ৬ মাস থাকব। তারপরেই আমার আইবিএমে চাকরি কনফার্ম বলে সব কাগজপত্র, এগ্রিমেন্ট, সহ আরো যা আছে সব সামনে তুলে ধরলাম। এটা দেখে আশ্চর্য্য হতে হলো যে আমার কাগজপত্র দেখে সাথে সাথেই আমাকে ৬ সংখ্যার একটা সেলারি অফার করে বসলো। সেই সাথে লম্বা একটা চুক্তির কথাবার্তার দিকে এগুতে লাগলো। আমি তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে আমি আমার ৬ মাসের হিসেবেই কথাবার্তা আগাতে লাগলাম। সব কথাবার্তা শেষ করে সেদিনের মতো চলে গেলাম, এবং কথা হলো মাসের মাঝখানেই আমার জয়েনিং, যেদিন থেকেই আমি শুরু করতে চাই সেদিন থেকেই পারব, আগেরদিন জানিয়ে দিলেই হবে।
আমিও চান্সটা আর মিস করতে যাইনি, পরদিন থেকেই জয়েন করব বলে সেদিনের মতো চলে আসলাম এবং পরদিন থেকেই ডিউটিতে লেগে গেলাম।

বাদশাহ ঘুমায়ুন।

শুক্র-শনিবার যেহেতু জাগতিক ব্যস্ততার কোনোরূপ সাংবিধানিক নিয়ম কানুন নাই সেহেতু এই দু’দিন নিয়ম করে অনিয়ম চর্চা করা-ই যাই। শুক্রবার দিনশেষে রাতে ঘুমানোর তাড়া না থাকায় বাদশাহ অন্যান্য সব নিয়মের অনিয়ম চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং সময় কাটানোর মেশিন হিসেবে বদনবই’র(ফেইসবুক) তুলনা আর কিছুই নাই মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে ভাবলেন সময়কে অসময়ে কনভার্ট করে নিতে বদনবই অ্যাপ এ গিয়ে কাত হয়ে, চিৎ হয়ে, উপুড় হয়ে পড়ে থাকা-ই যায়।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ, যথানিয়মে বিছানাকে সঙ্গ দেয়ার নাম করে বাদশাহ তাঁর প্রধান অস্ত্র দূরালাপনি যন্ত্র এবং যন্ত্রের খাদ্যশষ্য নিয়ে আনুমানিক রাত ১২টায় তন্দ্রাযান তথা খাটে অবস্থান করত; মনোযোগ সহকারে বদনবই দেখে গেলেন ঠিক ৫টা পর্যন্ত।
লোকে বলে শরীর হচ্ছে মহাশয় যা সওয়াবেন তাই সয়।
কথাটা পুরোপুরি সত্য না বুঝতে পেরে বাদশাহ ঠিক ৫ঃ৩০টায় নিদ্রাদেবীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যে গরীব, শনিবারের কামলা, আশেকান, মুরিদান, মুহিব্বীন, আত্মীয়-স্বজনদের দূরভাষ যন্ত্রে বিরক্তির স্বীকার হয়ে বেলা ১১ঃ৩০টার দিকে জগতে ফিরে আসতে হলো। একচক্ষুর ব্যবহার করে বাদশাহ তাঁদের সকলকে যথাসাধ্য সময় দিয়ে আবার দুপুর ঠিক ১২ঃ৩০টায় জগত ছেড়ে তন্দ্রাস্তানের উদ্দেশ্যে আবার রওনা হন। সব ক’টা দূরভাষ যন্ত্রের স্বর বন্ধ করে যাওয়াতে এবার আর তাঁর ফিরে আসতে হয়নি জাগতিক কোনো প্রয়োজনে।
টানা ০৬ঃ৩০টা পর্যন্ত নিদ্রাস্তান তথা নিদ্রাযানে ভ্রমন করে ফিরে আসেন আবার আমাদের মাঝে।
ফিরে আসার পর তাঁর মনে পড়লো রাতে সেহরীটা খেয়ে নিলে অন্তত কিছুটা সওয়াবের ভাগীদার হতে পারতেন। সেই সাথে আসছে রমজানের প্রস্তুতিটাও নেয়া হয়ে যেত।
তারপর পেট পুজো সেরে নিয়ে হালকা এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে আরো কিছুটা সময় সফলভাবে অপচয় করে বাদশাহ সিদ্ধান্ত নিলেন যেহেতু কালকে রবিবার এবং বাংলাদেশ সময় ভোর ৯টা থেকেই তাঁকে আবার জাগতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে। সেহেতু এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়ার বিকল্প আর কিছুই নাই।
এ ব্যাপারে বাদশাহ আপনাদের সকলের দোয়াপ্রার্থী।

অপেক্ষা

কেউ কারো অপেক্ষায় অপেক্ষমান নই
তবু সন্ধ্যা নামলে প্রদীপশিখা জ্বলজ্বল করে।
নশ্বর ভূমে যেন অবিনশ্বর স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই নেই
অনিয়মের নিয়মে পোড়াচ্ছি তবু ধ্বংসের দেখা নেই।

গোল্ডেন এ প্লাস পেতে পেতে অতিষ্ট

আজ আমার রেজাল্ট বেরোবে, আমি গোল্ডেন এ প্লাস পাচ্ছি সেটা আমি যেমন নিশ্চিত তেমনি আমাকে যারা চেনে সকলেই নিশ্চিত। ব্যাপারটাতে আমার বিন্দুমাত্র এক্সাইটমেন্ট কাজ করতেছে না। কখন বেরোবে সেই সময়টাও আমার দেখার কিংবা জানার প্রয়োজন পড়তেছে না।
সেই ক্লাস সিক্স থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেতে পেতে আমি অতিষ্ট।
মানুষজন এই রেজাল্ট নিয়ে যতটা আনন্দিত হয় কিংবা এর কম রেজাল্ট পেয়ে যতটা আনন্দিত হয় আমি তারও বেশী ব্যথিত হই।
আমার কাছে সেই ক্লাস ওয়ান থেকে তিন বছরে ক্লাস টুতে টেনে-টুনে কোনোমতে উঠার আনন্দটা বেশীই ছিল, পাড়া প্রতিবেশী কিংবা স্যারদের হাসির পাত্র হওয়ার দৃশ্যটাই ছিল আমার জন্য বেশ আনন্দের।
আমি সবসময়ই চাই নিজের মতো করে বাঁচতে, আমার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে। কিন্তু সেটা আর পারা হয়ে উঠে না। মেকি স্কিল মেকি রেজাল্ট মেকি মেধা এসবের কিছুই আমার ভালো লাগে না।

আমার জন্মের সময়ে আমার মা মারা গেলে বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করতে যান নি আমার কথা ভেবে, আমার কিছু হলে কিংবা আমাকে কেউ কিছু বললে সেটা বাবার সহ্য হত না। বাবা সবসময়ই আমাকে আগলে রাখতেন, আমার যখন যা প্রয়োজন হত তাই দিতেন। চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম আমি। জন্মের পর থেকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার দিকে কেউই আঙ্গুল তোলার কিংবা কিছু বলার সাহস দেখাতে পারেনি।
যখন প্রাইমারিতে ভর্তি হলাম, তিন মাস পর স্যারেরা আমার বাবাকে কল করলেন, আমার সেমিস্টার রেজাল্ট দেখানোর জন্য, বাবা আমার প্রত্যেকটা সাবজেক্টে ০০ দেখে এলেন। দ্বিতীয় সেমিস্টারেও একই রেজাল্ট এবং ফাইন্যালের রেজাল্টেও কোনো উন্নতি হল না।
এ নিয়ে বাবাকে স্যারদের অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছিল, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের কেউই আমাকে নিয়ে টাট্টা করা থেকে বাদ যাননি।
পরপর তিনবছর একই রেজাল্ট নিয়ে একই ক্লাসে থাকতে হয়েছিল আমাকে।
তারপর স্যারদের দয়া পরবশে একটা ক্লাস উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। সেই একই কাহিনী ক্লাস টু-তেও। এভাবে আমার সময়টা বেশ ভালোই যাচ্ছিলো, বাবার প্রতি আমার কোনো অভিযোগও ছিল না কোনোদিন কিংবা এ নিয়ে আমার কোনোদিন আফসুসও হয়নি।

আমার এক ফুফু থাকতেন আমেরিকার নর্থ ডাকুটাতে, বাবা ফুফুর সাথে দেখা করার কথা বলে আমাকে সেখানে নিয়ে গেলেন। আমরা যখন ডাকুটাতে পৌছাই তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিল।
সেখানকার এক মেডিকেল কলেজে আমাকে নিয়ে উঠলেন বাবা, বাবা ডাক্তার হওয়ায় এ বিষয় নিয়ে আমার তেমন একটা জানার আগ্রহ জন্মায়নি, সেখানকার অনেকে বাবার সাথে কী জানি শব্দে কথা বললেন বাবাও তাদের সাথে তাদের শব্দে কথা বলে চললেন। কেউ কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কী জানি বললেন আমি বুঝিনি তাই আমি চুপ থেকে গেলাম।
ওখানে বাবার ল্যাবরেটরির মতো একটা রুমে আমাকে নিয়ে গেলেন বাবা, তখনও আমি বুঝতে পারিনি আমার সাথে কী হতে চলছে।
আমাকে একটা চেয়ারের মধ্যে বসতে বলে বাবা রুম থেকে কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে গেলেন, যখন আসলেন তখন তার গায়ে মেডিকেলের ইউনিফর্ম পড়া হাতে হাবিজাবি কী-সব জিনিসপত্র। বাবা এসে আমাকে হেলান দিয়ে বসতে বলে আমার সীটের নিচ থেকে বেল্ট তুলে সেগুলো দিয়ে আমাকে প্যাচিয়ে নিলেন। তারপর সুইচ টিপতেই চেয়ারটা আস্ত একটা খাটে পরিণত হয়ে গেল। বসা থেকে আমি অটোম্যাটিক্যালি শোয়ার পর্যায়ে চলে গেলাম, তারপর বাবা আমার নাকের সামনে একটা বাক্স ধরে বললেন বাবা দেখো তো এটার গন্ধ কেমন?
আমি সরল মনে বাবার কথায় নাক দিয়ে টান দিই……..
যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন আমি আমার ফুফুর বাসায়.

তিনমাসের আমেরিকা সফর শেষে যখন আমরা দেশে ফিরলাম তখন ডিসেম্বর মাস চলে, পাড়া প্রতিবেশী সকলেই টিটকারী করার জন্য জানতে চাইলেন আমার পরীক্ষার রেজাল্ট কী, আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম কী না এই সব হাবিজাবি প্রশ্ন করতে থাকলেন আমাকে এবং বাবাকে।
এর আগে বাবা অনেকটা নরম থাকলেও এবার বাবা তাদের সাথে টিটকারী যোগ দিলেন এবং আমার দুর্বলতাটাকে বাবা সবলতার স্বরুপ তাদের সাথে টাট্টা করে যেতে লাগলেন।
যথারীতি জানুয়ারী মাস আসলে আমাকে ভর্তি করার জন্য বাবা স্কুলে নিয়ে গেলেন, আমাকে ভর্তি নিতে কেউই রাজি হননি, আমাদের পার্শ্ববর্তী স্কুলেও আমার ভর্তি নেয়া হয়নি।
বাধ্য হয়ে বাবা আমাকে নিয়ে শহরের একটি নামকরা স্কুলে ভর্তি করার জন্য নিয়ে গেলেন সেখানে তাদের নিয়মানুযায়ী আমাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভর্তি হবে।
পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে নিজের ফলাফলে নিজেই মুগ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না, প্রধান শিক্ষক প্রথমেই অফার করে দিলেন আমার কোনো টিউশন ফি লাগবে না, আমার টিফিনও স্কুলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হবে।
আমার আনন্দের আর সীমা নাই, গ্রামের স্কুলের শিক্ষকদের রীতিমতো বকাঝকা করতে ইচ্ছে করলেও তখন চুপ থেকে গেলাম।

গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই আমি আই.বি এমে চাকরী পেয়ে যাই, আইবিএম আমার লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে আমাকে শুধু স্যালারীই দিয়ে যাবে বিনিময়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে হবে।
আমার প্রাইমারী সহপাঠীদের অনেকেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরীর পিছনে ঘুর ঘুর করতেছে আর আমার কি-না গ্র্যাজুয়েশনের তিন বছর আগেই চাকরী রেডি তাও আবার কোনো প্রকার কাজ কর্ম্ম ছাড়াই বেতন ভোগ করে যাচ্ছি। ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও আনন্দের না, আমার বরং কষ্ট হচ্ছে নিজের মতো থাকতে না পারার জন্য, বাবাকে আমার ঘৃণা করতে ইচ্ছে করতেছে। সবাই যার যার ব্রেইনের ব্যবহার করতেছে আর আমি একটা চিপসের সাহাজ্যে অভার ট্যালেন্টেড হয়ে বাস করতেছি।

বাবা মারা যাওয়ার পর, বাবার ল্যাপটপটা আমি নিজেই ব্যবহার করা শুরু করি, একদিন বাবার মেইলে লগিন করলে দেখতে পাই আমেরিকান এক ডক্টর আমার ব্যাপারে আর আমার মাথায় থাকা চিপসের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন, ব্যাপারটাতে আমার কৌতোহল জাগলে আমি আমার পার্সোনাল মেইল থেকে সেই ডাক্তারকে মেইল করে জানতে পারলাম- আমাকে নিয়ে টিটকারী করা বাবার যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে পড়ে তখন বাবা অসহ্য হয়ে আমার মাথায় একটা চিপস লাগিয়ে দেন, যেটা এমএল এর পাওয়ারে চলবে , প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে দিন দিন আরো শক্তিশালি হতে থাকবে, আমার যখন কোনো কিছু মনে করার প্রয়োজন পড়বে অথবা জানার প্রয়োজন পড়বে তখন আমার মাথায় থাকা চিপস নিজে নিজে নেট থেকে ডাটা কালেক্ট করে আমার চোখের সামনে তুলে ধরবে, আর আমি হড়হড় করে সেটা বলে দেব। উল্লেখ্য যে আমার ব্রেইনের সেলগুলোর তেমন একটা ব্যবহার সম্ভব হয়ে উঠেনি, আমার ব্রেইনের সেলগুলোর ৯৯.৯৯% অব্যবহৃতই থেকে যেত, যার ব্যবহার কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না তাই বাধ্য হয়ে বাবা আমার অপারেশন করে আমার মাথায় চিপস বসিয়ে দেন।

সবাই যার যার মেধা আর স্মৃতি শক্তির ব্যবহার করে যাচ্ছে আর আমি স্মৃতি শক্তির পরিবর্তে চিপসের সাহাজ্যে ইন্টারনেট থেকে ডাটা নিয়ে সেটাই ব্যবহার করে যাচ্ছি।
কী এমন হতো আমি আজীবন মুর্খ থেকে গেলে, কিংবা ক্লাসের 
সেই আদু ভাই থেকে গেলে?

চামচিকা

– ভাই আপনাকে নেতা হিসেবে দারুন মানাবে, আপনি আসলে একটা জিনিস ভাই। আপনার মাথায় দারুন সব বুদ্ধি গিজগিজ করে। আপনার কুটনামি বুদ্ধি রাজনীতির বাজারে রাজ করবে।
: তা…… মনোনয়ন পেলে কয়টা ভোট পেতে পারি বলে তোর মনে হয়?
– বিপুল ভোটে পাশ করবেন ভাই, বিপুল ভোটে।
: শিউর কয়টা ভোট পাব সেটা বল।
– আমার একটা, আপনার নিজের একটা, ভাবী মানে আপনার ওয়াইফের একটা আর আপনার ভাইয়ের একটা এই চারটা তো একেবারেই কনফার্ম। বাদবাকি ডিপেন্ড করে মাঠের রাজনীতির উপর।
: এই ছোট্ট হিসাবেও তুই গড়মিল লাগায়া দিলি, আর তুই আইছস আমারে পরামর্শ দিতে?
– এই চারটা শিউর ভাই, ১০০% শিউর।
: তিনটা নাহয় মেনেই নিলাম, কিন্তু তুই কিভাবে ভাবলি আমার মতো একজন সচেতন মানুষ সৎ, যোগ্য প্রার্থী রেখে অন্য আরেকজনকে ভোট দিবে? আমাকে বোকা পাইছস? আমি নিজের ভোটটাও কাজে লাগাব না?

তখন আমি পড়ালেখার বাহানায় প্রায়ই বিদ্যালয়ে যেতাম

তখন আমি পড়ালেখার বাহানায় প্রায়ই বিদ্যালয়ে যেতাম, আমার উদ্যেশ্য যদিও দুষ্টুমি আর সময় পাস করাই ছিলো, তারপরেও ঘর থেকে বের হতাম পড়া-লেখার কথা বলে।
দুষ্টুরশিরোমণি হওয়াতে বিদ্যালয়ে আমার সেই লেভেলের কদর ছিল, বকবক করা আমার নেশা এবং দুষ্টুমি আমার পেশা, একই সাথে নেশা এবং পেশা দুইটাই মেইন্টেন করে যেতাম আমি। দুইটা দায়িত্বই আমি কোনোরকম অবহেলা কিংবা ত্রুটি ছাড়াই সমান গুরুত্বের সাথে আঞ্জাম দিয়ে যেতাম। যার কারণে স্যারদের অনেকেই আমার এমন পারফরমেন্সে খুশি হয়ে মাঝে মাঝে বেত ট্রিট দিতেন।
সে যাই হোক,
একদিন আমার বকবকে অতিষ্ঠ হয় স্যার নসিহত স্বরুপ বললেন-
– মানুষের সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে, শুধুমাত্র হায়াত না, বাকি সবকিছুরই থাকে।
– যেমন? (আমার প্রশ্ন)
– এই ধরো, একটা মানুষের বিশ বছর হায়াত আছে, তো তার বিশ বছরের সাথে প্রয়োজন মাফিক কথা বলার লিমিট, নিশ্বাসের লিমিট, খাবার লিমিট এবং যাবতীয় যা আছে সবকিছুরই লিমিট থাকে।
– কিভাবে?
– তুমি দেখোনি! মৃত্যুর পুর্বে কিছু মানুষ খেতে পারে না, আবার কেউ কেউ কথা বলতে পারে না, আবার কেউ কেউ হাঁটা-চলা করতে পারে না?
– তারমানে দাড়াচ্ছে একজন মানুষের সবকিছুই লিমিটেড, হায়াত, হাঁটা-চলা করা, খাবার দাবার, ঘুম সহ আরো যা কিছু আছে সব?
– ইয়েস সেটাই।
– আচ্ছা স্যার, এই যে, আমাদের নিয়ম করে পিটুনি দেন, চিল্লাপাল্লা করেন, অকারণে দাঁড় করিয়ে রাখেন, আপনার কি মনে হয় না! আপনার এবং আমাদের সবারই সবকিছু সীমিত করে দিচ্ছেন?
পিছনে কীসের জানি একটা আওয়াজ হলো এবং সেই সাথে হালকা ব্যথাও অনুভুত হয়েছিলো।
[মনে হলো যেন আমি আবুল হয়ে গেলাম, আর সেই সাথে হায়াতও কিছুটা কমে গেল]

অরূণিমা!

অরূণিমা!
আমাদের বিচ্ছেদের প্রথম প্রথম তোমাকে নিয়ে খুব আফসুস হতো,
বলতে পারো একধরণের করূণা হতো তোমার জন্য।
আমি এই ভেবে অস্থির হয়ে উঠতাম যে, তোমার ছোট ছোটো আবদার আর হুট করে রেগে যাওয়া; এসব কে সামলাবে আমার মতো করে?

অরূণিমা!
আমার আফসুস হতো, তুমি কোনোদিন আমাকে আয়না ভেবে তোমার কপালে টিপ দিতে পারবে না।
তোমার কপালের টিপ ঠিক করে দেয়া আর শাড়ির কুচি ঠিক করে দেয়ার যে গুরু দায়িত্ব আমার কাধে নিয়েছিলাম, এখন কে করবে এসব?

অরূণিমা!
তোমাকে আমার মতো কেউ বুঝবেনা, এমন দাম্ভিকতায় নিজেকে নিজেরই হিংসে হতো।
এই যে তোমার আপাদমস্তক ভালোবাসা ছিলো, তখন আমার কাছে দুনিয়াবি সুখ একেবারেই নস্যি মনে হতো।

অরুণিমা!
আমি এই ভেবে করুণা করতাম যে, তোমার চুল নিয়ে আর কেউ খেলা করবে না,
উল্লাসে মেতে উঠবে না আমার মতো,
সত্যি বলতে নিজেকে কতো করুণা করেছি আমি।
তোমাকে কে ভালোবাসবে না বলো? তুমি তো সবটাই ভালোবাসা।

অরূণিমা!
যখন মনে হয়, তোমাকে তোমার ডাক নামে অন্য কেউ ডাকছে,
তুমি অন্যের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখছো,
আমার তখন চাঁদকে অসহ্য লাগে।
জানো,
আমার মনে হয় চাদটা যদি আর না উঠতো, যদি গ্রহণ লেগে থাকতো,
যেমনটা লেগে আছে আমার মনে।

অরুণিমা!
যখন মনে হয় আর কখনো মাঝরাতে তোমাকে কাঁচা ঘুম থেকে জাগাতে পারব না, তোমায় আধ-খোলা চোখে দেখতে পাব না, সন্ধ্যায় আর তুমি আমার জন্য সেজে বসে থাকবে না, তোমার খোঁপায় আমি বেলিফুল গুজে দিতে পারব না; তখন পৃথিবীর বুকে কেমনজানি নিজেকে অসহায় মনে হয়, জানো?

অরূণিমা!
এইযে আমি, হ্যা আমি যে এসব না পারা কিংবা অনধিকার নিয়েই বেঁচে থাকবো,
সে যন্ত্রণা আমার অন্য কিছুতে ঘুচবে?
মানুষ কতো অল্প পুঁজিতে বাঁচে,
স্বল্প সুখ স্বল্প আশা আর অনেক বেশী ভালবাসা না নিয়েই বেঁচে থাকতে পারে।
আমাদের বিচ্ছেদ না হলে জানা-ই হতো না।

অরূণিমা!
মাঝে মাঝে ভাবি হয়তো এমন না হলে,
তেমন না করলে হয়তো সম্পর্কটা বেঁচে যেতো।
এই হাজার রকম হয়তো নিয়ে হয়তো বেঁচে আছি, বলা যায় ভালোই আছি।
এভাবেই হয়তো তোমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই চলে যাবো।
এইসব হয়তোর বেড়াজাল আর না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে,
আমি ভালোই আছি অরূ।
তুমি ভালো তো?

জ্যোতিষ

সে অনেকদিন আগের কথা, ইবলিশের সাথে মোটামুটি ভালই সম্পর্ক ছিল আমার, যার কারণে সবাই আমাকে আদর করে দুষ্টু ও ডাকতো।
আচ্ছা যাই হোক।
জনৈক জ্যোতিষ আমার কপালের দিকে তাকিয়ে বলে দিলেন আমি নাকি সিংহ রাশি’র জাতক। এই সেই হাবিজাবি আরো অনেক কিছু। আমি তখন অন্য আরেকটা ধান্ধায় ব্যস্ত ছিলাম, বিধায় উনার কথা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে নাই (যদিও আমি উনার কথাগুলো শুনেছিলাম)।

পরক্ষণে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা তুললে আমার মনোযোগ তার দিকে ফেরানোয় তিনি সফল হলেন এবং আমার অতীতবর্তমান আর ভবিষ্যত সব নিয়ে আলাপ শুরু করে দিলেন।
ঘটনা কিছুদুর যাক তার আগেই আমি উল্টো আরেকটি ঘঠনার জন্ম দেয়ার চেষ্টায় নেমে পড়লাম। যথারীতি তাকে এই সেই হাবিজাবি অনেক প্রশ্ন করা শুরু করে দিলাম। উনি আমার হাত দেখে ভবিষ্যৎ বলার জন্য আমার সাথে ২০০টাকার একটা শান্তি চুক্তি করলে যথানিয়মে আমার হাত দেখলেন, এবং অনেক কিছুই বললেন। তো আমি আরো ২০০ টাকার আরেকটা চুক্তি করলাম আরেকটা হাতের জন্য। উনি রাজি হলেন, এবং বললেন হাতটা দিতে, আমি উত্তরে বললাম তার নিজের হাতটাই দেখতে।
বেচারা মাইনকার চিপায় পইড়া গেল, আমিও নাছোড় বান্দা ছেড়ে দেয়ার লোক নই, তাই শেষমেষ বেচারা বাধ্য হয়েই নিজের হাতটা নিজে দেখল এবং অনেক কিছুই বলল। তার ভবিষ্যৎ গননা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলাম আর কিছু আছে কি না! উত্তরে তিনি না বললে আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম আর কিছু আছে কি না! উনি আবারও না উত্তরটা দিলেন।

ব্যস আমি রাস্তা মাপা শুরু করলাম।
বেচারা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল! ও ভাই আমার টাকাটা দিয়ে যান।
আমি উত্তর দিলাম “আপনি আমার, আপনার উভয়ের ভবিষ্যৎ দেখলেন অথচ এইটা দেখতে পেলেন না! আমি যে আপনাকে ঠকিয়ে দৌড় দিব? আপনি কিসের জ্যোতিষ?”