বিষ্যুদবার রাত, যে রাত টারে একান্ত নিজের মনে হয়, যাচ্ছে তাই করতে পারি, যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, নিশাচর হয়ে সারারাত কাটিয়ে দিতে পারি। সে যাই হোক, এ রাতের আরো অনেক মূল্যবান বিষয়াবলী আছে যা বলে শেষ করার মতো না।
বদ্রুলদারে ফোন দিলাম, দাদা চলো এক জায়গা থেকে ঘুরে আসি। কোনোধরণের পাল্টা প্রশ্ন ছাড়াই রাজি হয়ে গেল। বুঝলাম পোলাপান এখনও মানুষকে বিশ্বাস করতে জানে, অন্ধের মতো বিশ্বাস করার দুঃসাহস এখনও মানুষের আছে।
আমার অনেক দিনের ইচ্ছা হুট করে কারো বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলবো, বন্ধু, আমি এসে গেছি হতভম্ব হয়ে বন্ধুটি আমায় অনেকক্ষণ দেখবে, ভুত দেখার মতো রিয়েক্ট করবে। আমি তার চেহারার দিকে চেয়ে থাকব। মানুষ যখন কোনো কারণে হতভম্ব হয়, তখন তার চেহারাটা বড়ই মায়াবী হয়, বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। একটা নিষ্পাপ ভাব ফুটে আসে চেহারার মাঝে।
পৃথিবীর সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে এটাও একটা সুন্দর দৃশ্য।
রাত ন’টা, বন্দর থেকে রওয়ানা দিলাম। উদ্যেশ্য প্রেমিকা সুরমার পারে থাকা সাখাওয়াত ভাইকে একবার দেখে আসব।
জগতে এই একটা মাত্র শত্রুই আমার জীবিত আছে, যারে দেখলেও শরীরে জ্বলে, না দেখলেও জ্বলে। সত্যি কথা বলতে হিংসে হওয়া যেটারে বলে সেটাই। বাজারে সাখাওয়াত ভাইয়ের দোকানে হামলা চালাইলাম।
হাজার বছরের পুরনো সেই নিষ্পাপ চেহারাটা দেখলাম, স্বাদ মিটিয়ে একবার দেখে নিলাম মি. “থ” কে।
মি. “থ” ঘোর থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় নিলেন, এই সেই নানান ধরণের নানান তাল বাহানায়। আমরাও সেটা বুঝতে পেরে স্কিপ করে গেলাম।
বেশ কিছু ইচ্ছার একটা ইচ্ছা হচ্ছে তীরভাঙা নদীর পারে কেউ একজন বসে থাকবে, ফুটবল নিয়ে মানুষ যেমন প্র্যাক্টিস করে আমিও তেমনি একটা প্র্যাক্টিস করব। সেই সুযোগটাও এসেছিল সে রাতে। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা বা কাছাকাছি হবে, ঠিক তখনই এসেছিল। হাতে জন প্লেয়ার কাঁধে ব্যাগ পায়ে কুটকুটানি ব্যথা। সামনে নদী, নদী আর আমার মাঝখানে পায়ের কুটকুটানি সারানোর ঔষধ। সেই পুরনো ইচ্ছেটা আবার জেগে উঠলো।
কিছু কিছু ইচ্ছের জন্মই হয় গলাটিপে হত্যা করার জন্য, এটাও তেমন একটা ইচ্ছা।
ক্লাস ফোরে পড়াকালীন সময়ে একবার গ্রাম্য এক স্কুলে টেম্পোরারি রেজিস্টার্ড হয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম, সাঁতারু হিসেবেই ভালোই ছিলাম তখন, সুযোগ পেলেই ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকতাম পুকুরে আর দিনশেষে চোখ লাল হওয়ার অপরাধে বকাঝকা খেতাম, ভাগ্য বেশি ভালো থাকলে মাঝেমাঝে বেত্রাঘাতও কপালে জুটতো।
সাখাওয়াত ভাইয়ের বাড়ির পুকুর দেখে সেই পুরনো নেশাটা আবারো জেগে উঠলো, পুকুর দেখে রীতিমতো অবহেলার সুরে বলেই ফেললাম এই একটা পুকুর হল?
প্রায় ~৮ বছর পরে পুকুরে নেমে বুঝলাম এটাও একটা পুকুর বটে, আগে যেখানে ডুব দিয়ে এক পার থেকে অপর পারে গিয়ে থামতাম এখন সেখানে দু’হাত জায়গাও আগাইতে পারি নাই।
বেশ কিছু মানুষের সাথে দেখা হল, কথাও হল। সেখানকার অনেকেই আবার আমার সাথে থাকা কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, দার্শনিক, চিন্তাবিদ ভাইয়ের কবিতার ফ্যান। কবির সাথে থাকতে পারায় সেখানে নিজেকেও অনেকটা গর্বিত মনে হল।
জুমা’র নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়া পর্ব সেরে সোজা শহরেই চলে আসলাম, আমার পাশে কবি, কবির পাশে কবিতা। কোনো সাড়াশব্দ ছাড়াই সারাটা পথ গাড়িতে বসে আসতে হল, কবি বা কবিতার ডিস্টার্ব নষ্ট হোক সেটা চাইনি বলেই চুপচাপ বসে থাকলাম।
সিএনজি থেকে নেমে যে যার মতো যার যার নিজস্ব যান্ত্রিকতায় আবারো ফিরে গেলাম।