মিথ্যাবাদি

একজন পাশে বইসা জ্ঞ্যান ঝাড়তেছেন, আমি তা আহরণ করতেছি গভীর মনোযোগের সাথে। যেটা আমি প্রায়ই করি, কেউ জ্ঞ্যান দিলে সেটা এমনভাবে আহরণ করি, যাতে তার জ্ঞান দেয়া বিফল গেছে এমনটা তার কল্পনায়ও না আসে।
তো যাই হোক উনি বললেন “উপরের দিকে থুথু ছুড়লে সেটা নিজের গায়েই লাগে” বিষয়টা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তাই উনি নিচে যাওয়ার পর দু’তলার বারান্দা থেকে হালকা এ্যাঙ্গেল করে উপরের দিকে থুথু ছুড়ে আমিও হালকা পিছিয়ে গেলাম।

ফলাফল :
মিথ্যাবাদি কোথাকার, হুদাই জ্ঞ্যান দেয় মানুষেরে।

মছকাল্যান্ড

বিষ্যুদবার রাত, যে রাত টারে একান্ত নিজের মনে হয়, যাচ্ছে তাই করতে পারি, যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, নিশাচর হয়ে সারারাত কাটিয়ে দিতে পারি। সে যাই হোক, এ রাতের আরো অনেক মূল্যবান বিষয়াবলী আছে যা বলে শেষ করার মতো না।

বদ্রুলদারে ফোন দিলাম, দাদা চলো এক জায়গা থেকে ঘুরে আসি। কোনোধরণের পাল্টা প্রশ্ন ছাড়াই রাজি হয়ে গেল। বুঝলাম পোলাপান এখনও মানুষকে বিশ্বাস করতে জানে, অন্ধের মতো বিশ্বাস করার দুঃসাহস এখনও মানুষের আছে।

আমার অনেক দিনের ইচ্ছা হুট করে কারো বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলবো, বন্ধু, আমি এসে গেছি হতভম্ব হয়ে বন্ধুটি আমায় অনেকক্ষণ দেখবে, ভুত দেখার মতো রিয়েক্ট করবে। আমি তার চেহারার দিকে চেয়ে থাকব। মানুষ যখন কোনো কারণে হতভম্ব হয়, তখন তার চেহারাটা বড়ই মায়াবী হয়, বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। একটা নিষ্পাপ ভাব ফুটে আসে চেহারার মাঝে।
পৃথিবীর সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে এটাও একটা সুন্দর দৃশ্য।

রাত ন’টা, বন্দর থেকে রওয়ানা দিলাম। উদ্যেশ্য প্রেমিকা সুরমার পারে থাকা সাখাওয়াত ভাইকে একবার দেখে আসব।
জগতে এই একটা মাত্র শত্রুই আমার জীবিত আছে, যারে দেখলেও শরীরে জ্বলে, না দেখলেও জ্বলে। সত্যি কথা বলতে হিংসে হওয়া যেটারে বলে সেটাই। বাজারে সাখাওয়াত ভাইয়ের দোকানে হামলা চালাইলাম।
হাজার বছরের পুরনো সেই নিষ্পাপ চেহারাটা দেখলাম, স্বাদ মিটিয়ে একবার দেখে নিলাম মি. “থ” কে।
মি. “থ” ঘোর থেকে বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় নিলেন, এই সেই নানান ধরণের নানান তাল বাহানায়। আমরাও সেটা বুঝতে পেরে স্কিপ করে গেলাম।

বেশ কিছু ইচ্ছার একটা ইচ্ছা হচ্ছে তীরভাঙা নদীর পারে কেউ একজন বসে থাকবে, ফুটবল নিয়ে মানুষ যেমন প্র্যাক্টিস করে আমিও তেমনি একটা প্র্যাক্টিস করব। সেই সুযোগটাও এসেছিল সে রাতে। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা বা কাছাকাছি হবে, ঠিক তখনই এসেছিল। হাতে জন প্লেয়ার কাঁধে ব্যাগ পায়ে কুটকুটানি ব্যথা। সামনে নদী, নদী আর আমার মাঝখানে পায়ের কুটকুটানি সারানোর ঔষধ। সেই পুরনো ইচ্ছেটা আবার জেগে উঠলো।
কিছু কিছু ইচ্ছের জন্মই হয় গলাটিপে হত্যা করার জন্য, এটাও তেমন একটা ইচ্ছা।

ক্লাস ফোরে পড়াকালীন সময়ে একবার গ্রাম্য এক স্কুলে টেম্পোরারি রেজিস্টার্ড হয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম, সাঁতারু হিসেবেই ভালোই ছিলাম তখন, সুযোগ পেলেই ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকতাম পুকুরে আর দিনশেষে চোখ লাল হওয়ার অপরাধে বকাঝকা খেতাম, ভাগ্য বেশি ভালো থাকলে মাঝেমাঝে বেত্রাঘাতও কপালে জুটতো।

সাখাওয়াত ভাইয়ের বাড়ির পুকুর দেখে সেই পুরনো নেশাটা আবারো জেগে উঠলো, পুকুর দেখে রীতিমতো অবহেলার সুরে বলেই ফেললাম এই একটা পুকুর হল?
প্রায় ~৮ বছর পরে পুকুরে নেমে বুঝলাম এটাও একটা পুকুর বটে, আগে যেখানে ডুব দিয়ে এক পার থেকে অপর পারে গিয়ে থামতাম এখন সেখানে দু’হাত জায়গাও আগাইতে পারি নাই।

বেশ কিছু মানুষের সাথে দেখা হল, কথাও হল। সেখানকার অনেকেই আবার আমার সাথে থাকা কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, দার্শনিক, চিন্তাবিদ ভাইয়ের কবিতার ফ্যান। কবির সাথে থাকতে পারায় সেখানে নিজেকেও অনেকটা গর্বিত মনে হল।

জুমা’র নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়া পর্ব সেরে সোজা শহরেই চলে আসলাম, আমার পাশে কবি, কবির পাশে কবিতা। কোনো সাড়াশব্দ ছাড়াই সারাটা পথ গাড়িতে বসে আসতে হল, কবি বা কবিতার ডিস্টার্ব নষ্ট হোক সেটা চাইনি বলেই চুপচাপ বসে থাকলাম।
সিএনজি থেকে নেমে যে যার মতো যার যার নিজস্ব যান্ত্রিকতায় আবারো ফিরে গেলাম।

তুমিও নাই, নিকোটিনও সাথে নাই

সুন্দর রাত, আমি আদৌ জানিনা ইহাকে সুন্দর বলে কি না, ঘুটঘুটে অন্ধকার তার সাথে ঝিরঝির বৃষ্টি। চাঁদ, তারা কেউই নেই আজ আকাশে। একাকী আকাশ সাথে আছে মেঘমালা। পৃথিবী অন্ধকার হোক কিংবা আলোকিত হোক তাতে আকাশের কিচ্ছু যায় আসে না। আকাশ তার সৌন্দর্য নিয়ে তারমত বসে আছে।
এমন রাতের মাদকতায় খুন হতে কোন আপত্তি নাই, আকাশ আর আমি খুবই কাছাকাছি, আমি এটাও জানিনা যে কতটা দূরে থাকলে তাকে দুরত্ব বলে, যেহেতু আমি আর আকাশ একে অন্যে দেখতেছি সেহেতু আমরা খুব নিকটেই আছি।

মিউজিক প্লেয়ারে এ্যালান ওয়াকারের এ্যালোন ট্র্যাকটা বাজতেছে, হাতে একটা জন প্লেয়ার থাকলে মন্দ হত না, নিকোটিনের বাক্স টা যে রুমে রেখে চলে এসেছি।
একটা তুমি থাকলে ফোন দিয়ে একসাথে আকাশ দেখার লোভ দেখিয়ে প্যাকেট টা আনানো যেত। সেই যাই হোক, তুমিও নাই নিকোটিনও সাথে নাই, আবার এমন মাদকতায় ঘেরা আকাশ রেখে রুমে যাওয়ার কোনো মানে হয় না, একটা জন প্লেয়ারে যে পরিমাণ নেশা হবে, আকাশে তারও বেশী নেশা আছে।

ছাদের উপরে বেশ কয়েকটা ভাঙা দরজা রাখায় জায়গাটা মোটামুটি শুয়ে থাকার উপযুক্ত, আমি শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতেছি, কানে হেডফোন লাগানো তাও আবার ফুল ভলিউমে গান বাজতেছে। হঠাৎ গান অফ হয়ে রিংটোন ভেজে উঠলে ঘোর কেটে যায়। আননোন নাম্বার। এই নেশার ঘোরে থাকা সময়টাতে ডিস্টার্ব করার কোনো মানে হয়? অনিচ্ছা স্বত্বেও ফোনটা রিসিভ করলাম, আমি হ্যালো বলার আগেই।
– আচ্ছা আপনি কী প্রতিদিনই নিয়ম করে আকাশ দেখেন?
– হ্যা কিন্তু আপনি কে?
– আমাকে আপনি চিনবেন না।
– ঠিক আছে, যেহেতু চিনবই না সেহেতু…
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

আমার বান্ধবী মাহবুবা যার সাথে ক্লাস ফোর পর্যন্ত একটা পুরো দিন সম্পর্ক ভালো ছিল না, তারপর আমি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাউণ্ডুলে হওয়ার পর আমাদের আর সম্পর্ক খারাপ হয়নি। অবশ্য তারও একটা কারণ আছে, মাহবুবা-ই সম্ভবত সেই মানুষ যাকে আমি সবচেয়ে বেশী ভয় পাই, একই সাথে সেই মানুষ যাকে আমি নির্দিধায় যাচ্ছে তাই বলতেও পারি।

ফোনের পর আকাশী নেশার ঘোর প্রায় কেটে গেছিলো, ওদিকে আর মনোনিবেশ করতে পারিনি। তারপর যান্ত্রিকতায় ডুবে গেলাম। ফেসবুক স্ক্রল করতেছি হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে মাহবুবার মেসেজ “হারামজাদা মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনলে ভাব বেড়ে যায়? কালকে দেখা করিস”

ফালতু বকবক

– বুঝলেন দাদা “একটা সময় ছিল, আমি তাকে বিরক্ত করতে করতে বিরক্ত হতাম, সে বিরক্তি পেতে পেতে বিরক্ত হত।
এখন- আমি বিরক্ত করতে না পেরে বিরক্ত, আর সে বিরক্তি না পেয়ে বিরক্ত।
আমরা উভয়েই উভয় সিচুয়েশনে উভয়ভাবে বিরক্ত।”
– আপনার এত এত বিরক্তির কথা শুনতে গিয়ে আমি নিজেও বিরক্ত।

কথোপকথন

-পড়ে থাক না কিছু ইচ্ছে! না পাওয়ার খাতায় বন্ধী।
-খাতাগুলো মিলে যে হয়ে গেছে বিষাদের পূর্ণ একটা লাইব্রেরী।
– হোক না, মন খারাপের বিষাদগাথা।
– রাখার জায়গা যে আর নাই।

ফালতু বকবক

– ভাই দেখতেছি অনেক্ষন যাবৎ মন মরার মত বইসা আছেন, কোনো কারনে মন খারাপ?
– হুমমমমমমমম
– কেন কী হইছে?
– মানুষের মন খারাপের কত কারন থাকে, আমি মন খারাপ করার মতো একটা কারনও খুঁজে পাই না। মন খারাপের কোন কারণ খুঁজে পাইনা দেখে আমার মন খারাপ।

হুদাই প্যাচাল

মেয়েটা আমার মাশাল্লাহ, ইংরেজিতে হড়হড়ে বমি করে, মডার্ণ স্টাইলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। মেয়ে নয় যেন আমার একটা ছেলে দিয়েছেন আল্লাহ, রাত বিরাতে বাজার করে নিয়ে আসতে পারে। একেবারে পুরা ওয়েস্টার্ন স্টাইলে চলাফেরা করে।
কিন্তু ভাতিজা হারামজাদাটা মানুষ হইলো না, সারাদিন বাউণ্ডুলের মতো ঘুরে বেড়ায়, সালাম কালাম কিচ্ছু নাই।

আকামের আলাপ

অনেকদিন হয়ে গেছে আম্মু বকা দেন না, ব্যাপারটা অসহ্য লাগতে লাগতে একেবারে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমনটা আর মেনে নেয়া যায় না। মুরুব্বিরা ছোটোদের বকবেন, কারণে অকারণে বকবেন, ভুল করলেও বকবেন এমনকি ভুল না করলে কেন করল না সেজন্য বকবেন, এমনটা নিয়ম হওয়া উচিত ছিল। নিয়ম অমান্য করলে শাস্তি/জেল/জরিমানার বিধান রাখা উচিত ছিল।
যেহেতু এমনটা কোনো নিয়মে নাই আবার বকা খাওয়া ছাড়া আমার চলতেছে না, সেহেতু অন্য রাস্তায়, অন্যভাবে আমাকে সেটা আদায় করে নিতে হবে।

ঠিক বাড়িতে আসার দিনে, গেলাম রক্তদান কেন্দ্রে, রক্তদান কেন্দ্রের যে ঘরে রক্ত নেয়, সে ঘরে রক্ত দেয়ার ভঙ ধরে শুয়ে থাকলাম। নার্স আসলো, রক্ত নেয়ার সেই সুঁই ঢুকাইলো। তারপর সেটা বের করে নিতে বললাম। আমার ছিদ্র করা দরকার, সেটা হয়ে গেছে। ব্যস আমার প্ল্যান সাকসেস। কিছুক্ষণ পরে হাতে কী একটা লাগিয়ে দিলো, যেটার জন্য আমার এত্ত কাহিনি করা। সেটা নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসলাম।

হুহ, বকা খাওয়া আমাদের মৌলিক অধিকার গুলোর একটি, বকবানা? আমরাও চিনি।
আপাতত এটাই আমার ঈদ, এবং এই বকা আগামী যতদিন চলবে ততদিনই আমার ঈদ। যদিও খাবার দাবারের নির্যাতন সহ্য করে যেতে হবে বাড়িতে যে কয়দিন আছি। তারপরেও সমস্যা না। ঈদ তো ঈদ-ই।
ও হ্যা! ঈদ মোবারক।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন।

আমি গুনে গুনে চারদিনের উপোস, পানি ছাড়া পেটে কিছুই পড়ে নি। পকেটের শরীর এবং স্বাস্থ্য ভালোও না আবার একেবারে খারাপও না, নাই বললেও ভুল হবে আবার যা আছে, তা দিয়ে বড়জোর একটা বিড়ি খাওয়া যাবে।
আমি শুয়ে আছি, ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় আমার বন্ধু টিস্যু পেপার দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আমাকে একের পর এক মোটিভেশনাল বয়ান দিয়ে দিয়ে আমাকে মোটিভেট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যাক! অভাবের সময়েও আমার বন্ধু আমাকে ছেড়ে যায়নি, সেটাই বা কম কীসে?
ধন্যবাদ বন্ধু, পাশে থাকার জন্য।

কৃতজ্ঞতাস্বীকার

আমি মুম্বাসার কাছাকাছি কোনো এক অচেনা রাস্তা ধরে ভুল করে অপরিচিত জঙ্গলে ঢুকে ক্ষুধার্ত দুই ব্যাঘ্রর ভাগাভাগি ঝগড়ার মাঝখানে দাড়িয়ে আছি।
ঠিক সেই সময়ে সিলেট থেকে কেউ একজন ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি কোন দল সাপোর্ট করি, ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা।

এই বিপদের সময়ে কেউ একজন ফোন দিছে সেটাই বা কম কীসে?